‘ছাত্রলীগ ছাড়া অন্য কোনো রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না আজাদ’

লক্ষ্মীপুর-৩ (সদর) আসনের উপ-নির্বাচনে ব্যালটে অনবরত নৌকা মার্কায় সিল মারা সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আজাদ হোসেনকে ‘শিবিরকর্মী’ হিসেবে আখ্যা দেওয়া আজাদ আত্মগোপনে চলে গেছেন। মঙ্গলবার সারাদিন জেলার সংবাদকর্মীরা তার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন।

 

এর আগে দুপুরে নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ের সামনে গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে লক্ষ্মীপুর-৩ (সদর) আসনের উপ-নির্বাচনে বেসরকারিভাবে বিজয়ী নৌকার প্রার্থী ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম ফারুক পিংকু তাকে শিবিরকর্মী হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। অথচ আজাদ থানা কমিটির আগে ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ছিলেন।

 

 ছাত্রলীগের একজন কর্মীকে শিবির আখ্যা দেওয়ায় স্থানীয়ভাবে ব্যাপক সমালোচনা সৃষ্টি হয়েছে।

আ.লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ছাত্রলীগ ছাড়া অন্য কোনো রাজনীতির সঙ্গে কখনও যুক্ত ছিলেন না আজাদ। আজাদ ছাত্রলীগের রাজনীতিই করে।

 

অনেকের মতে, শিবিকর্মীর বিষয়টি দায়সারা বক্তব্য ছিল। এছাড়া শিবির বা ছাত্রদল কর্মী হলে কখনোই এভাবে প্রকাশ্যে নৌকা মার্কায় সিল মারতো না। আর শিবির ও ছাত্রদল কর্মী হলে আজাদকে আওয়ামী লীগের লোকজন কেন্দ্রে ঢুকতে দিতো বলে মনে হয় না।

সোমবার (৬ নভেম্বর) বিকেল থেকে আজাদের মোবাইল ফোন বন্ধ রয়েছে। বক্তব্য জানতে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় একাধিকবার তার ফোনে কল দিলেও সংযোগ পাওয়া যায়নি। তিনি এলাকায় রয়েছেন বলেও কোনো সন্ধান দিতে পারেনি কেউ। ধারণা করা হচ্ছে আতঙ্কে তিনি গা-ঢাকা দিয়েছেন।

 

এর আগে গতকাল রোববার (৫ নভেম্বর) একটি ভোট কেন্দ্রে ব্যালট বইয়ে নৌকা মার্কায় অনবরত সিল মারেন আজাদ। রাতে নির্বাচনী ফলাফল ঘোষণার পর জেলা শহরের বাসায় গিয়ে আজাদ নৌকার প্রার্থী পিংকুকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান। সিল মারার ভিডিও’র ন্যায় ফুল দেওয়ার ছবিটিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসুবকে ছড়িয়ে পড়ে।

 

আজাদ সদর উপজেলার দিঘলী ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ খাগুড়িয়া গ্রামের বাচ্চু মিয়ার ছেলে। তিনি ছাত্রলীগের সঙ্গেই জড়িত ছিলেন বলেই জানে এলাকাবাসী। ২০২২ সালের ১০ নভেম্বর চন্দ্রগঞ্জ থানা ছাত্রলীগের কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটিতে আজাদকে সহ-সভাপতি মনোনীত করা হয়। পরে গত ৮ অক্টোবর দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে তাকে বহিষ্কার করে জেলা ছাত্রলীগ। এর আগে তিনি দিঘলী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ছিলেন।

আজাদের বাবা বাচ্চু মিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি।

 

দিঘলী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইমরান হোসেন বলেন, আজাদ ইউনিয়ন কমিটির সভাপতি প্রার্থী ছিলেন। কিন্তু কমিটিতে তাকে রাখা হয়নি। পরে তিনি চন্দ্রগঞ্জ থানা কমিটিতে প্রার্থী হন। থানা কমিটিতে তাকে সহ-সভাপতি মনোনীত করা হয়।

আজাদ চন্দ্রগঞ্জ থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এম মাসুদুর রহমান মাসুদের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। আজাদকে শিবিরকর্মী আখ্যা দেওয়ার বিষয়ে ছাত্রলীগ নেতা মাসুদ বলেন, দলীয় শৃৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে আজাদকে ছাত্রলীগের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়। আজাদ শিবিরকর্মী ছিল এমন কোনো অভিযোগ ছিল না। নৌকায় সিল মারার ভিডিওটি উপ-নির্বাচনের নয় বলে জানিয়েছে আজাদ। এখন সে আমাদের ছাত্রলীগের কেউ না। আমার সঙ্গে অনেকেই ছবি তুলতে পারে, একসঙ্গে চলতে পারে। তবে আজাদ তার অনুসারী কিীনা-এমন প্রশ্নে তিনি সদুত্তর দিতে পারেননি।

চন্দ্রগঞ্জ থানা ছাত্রলীগের সভাপতি আবু তালেব বলেন, দলের বিরুদ্ধে গুজব ছড়ানোর অভিযোগে আজাদকে ৮ অক্টোবর বহিষ্কার করেছে জেলা ছাত্রলীগ। এখন আবার সেই বিতর্কিত কাণ্ড ঘটিয়েছে। দল থেকে বহিষ্কৃত একজন লোককে কীভাবে কেন্দ্রে ঢুকতে দেওয়া হলো তা বোধগম্য নয়।

জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেন ভূঁইয়া বলেন, আজাদ উচ্ছৃঙ্খল ছিল। দলীয় নিয়মনীতি মানতো না। এজন্য তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। থানা কমিটির আগে আজাদ অন্য কোনো দায়িত্বে ছিলেন কীনা তাও জানা নেই। তার বিরুদ্ধে শিবিরের সঙ্গে জড়িত থাকারও অভিযোগও পাওয়া গেছে। কিন্তু শিবিরের সঙ্গে জড়িতের অভিযোগের বিস্তারিত জানাতে পারেননি তিনি।

 

আজাদের ব্যাপার জানতে দিঘলী ইউনিয়ন পরিষদের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য (মেম্বার) আনোয়ার হোসেনকে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। তবে ইউনিয়ন পরিষদের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য (মেম্বার) নুরুল আমিন বলেন, আজাদের বাবা বাচ্চু আমাদের সমবয়সী। বাচ্চু বিএনপির সমর্থক, তবে কোনো পদ-পদবি নেই। আজাদ ছাত্রলীগের রাজনীতিই করতো। শিবির বা ছাত্রদলের সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়টি কখনোই শুনিনি।

 

দিঘলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. সালাউদ্দিন চৌধুরী জাবেদ বলেন, আজাদ শিবির ও ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। কিন্তু সে কীভাবে ছাত্রলীগের পদ পেয়েছে তা বলতে পারছি না। তার পরিচয় যাচাই করার জন্য ছাত্রলীগ থেকে কখনও আমার কাছে কেউই কিছু জানতে চায়নি। আচার-আচরণে শিবিরের সঙ্গে জড়িত থাকার ঘটনা প্রকাশ পেলে তাকে ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়। সে এখন কোথায় আছে তা বলতে পারছি না। দল থেকে এখনও তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থার কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। সিদ্ধান্ত পেলেই আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জামায়াতের এক নেতা বলেন, এসব নির্বাচন আমরা সমর্থন করি না। এজন্য আমাদের কেউই নির্বাচনী কেন্দ্রের আশপাশেও যাবে না। বড় ধরনের দোষ ঢাকতে এখন ছাত্রলীগ নেতাকে ‘শিবিরকর্মী’ বলে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।

Leave a Reply

Shares